রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন
বর্তমান দশম জাতীয় সংসদকে ‘জনকল্যাণকর’ ও ‘অর্থবহ’ সংসদ বলে দাবি করে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা প্রশ্ন তুলেছেন, এই সংসদ না থাকলে গণতন্ত্র কোথায় যেত? তারা আরো বলেছেন, গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার প্রতীক এই সংসদ। বর্তমান সংসদ গঠিত না হলে তৃতীয় শক্তি এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করত। দেশের উন্নয়ন যাত্রা ব্যাহত হতো।
দশম সংসদের সমাপনী বছরে পদার্পণের দিনে আজ সোমবার গত ৪ বছরের মূল্যায়ন নিয়ে এক অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ। পরে এতে অংশ নেন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুল মতিন খসরু, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) কাজী ফিরোজ রশিদ, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ।
আলোচনা চলাকাল সভাপতির চেয়ারে বসা ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘আমার দীর্ঘ জীবন প্ররিক্রমায় যে কয়টি সংসদে দেখেছি। তার মধ্যে নবম সংসদ এবং দশম সংসদ অত্যন্ত অর্থবহ। এর চাইতে অর্থবহ সংসদ আমরা আগে কোনো দিন দেখি নাই। বিশেষ করে দশম সংসদের কার্যকলাপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা একটি বিরল ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম বলেই দেশে গণতন্ত্র ও সংবিধান সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই দশম সংসদ শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্ব ব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এই সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন এমপিরা।’
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এই সংসদ খুব সফল সংসদ। এই সংসদ এরই মধ্যে সফলতা অর্জন করেছে। এই পার্লামেন্ট গঠনমূলক। এখানে বিরোধী দল বিভিন্ন বিষয়ে কথা তুলেছেন সেই প্রসঙ্গে মন্ত্রীরা জবাব দিয়েছেন। এই সংসদে অনেকগুলো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এই সংসদ গঠনের সময় বিএনপিসহ কেউ কেউ বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। অথচ যারা প্রশ্ন তুলেছিলেন তাদের কেউ কেউ নিজেরাই দুই একবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যেমন ড. কামাল হোসেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব এই সংসদকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আইপিইউ ও সিপিএ এর মতো দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় আমাদের এই সংসদের দুইজন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কাজেই এই সংসদ আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত।’
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘সেদিন যদি নির্বাচন না হতো আর এই সংসদ যদি না থাকতো তাহলে দেশের অবস্থা কোথায় যেত প্রশ্ন রাখেন তিনি। তৃতীয়শক্তি এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করে রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতো। সেদিন নির্বাচন হয়েছিল বলে সাংবিধানিক ধারা অব্যহত আছে। আজ গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কে আসল, কে আসল না এটা তাদেরই দায়িত্ব। এ সময় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভাসানির দল আসেনি তাতেও কিন্তু নির্বাচন হয়েছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনকে এমন একটা জিনিস একটা দেশকে স্বাধীনতাও দিতে পারে, গণতন্ত্রও দিতে পারে। কাজেই নির্বাচনের এই ধারা অব্যহত থাকবে। কে আসবে না আসবে আমাদের দেখার বিষয় না।’ বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে সেলিম বলেন, ‘গত নির্বাচনে নির্বাচনী ট্রেন মিস করেছেন, আগামীতে ট্রেন মিস করলে ছিটকে পড়বেন। উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে আগামি সংসদ হবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংসদ।’
এর আগে প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার প্রতীক এই সংসদ। এই সংসদ না থাকলে গণতন্ত্র কোথায় যেত?’ তিনি জানান, বিগত নবম সংসদের কার্য দিবস ছিল ৪১৮ দিন। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন ৩৩৬ দিন। আর বিএনপির চেয়ারপার্সন ছিলেন মাত্র ১০ দিন। আজকের দশম সংসদে এখন পর্যন্ত বৈঠক বসেছে ৩৪২ দিন। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন ২৮৪ দিন আর বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ২০৪ দিন। এ সময়ে পাস হয়েছে ১৩১ বিল। চলতি সংসদে কোরাম সংকট নেই উল্লেখ করে চিফ হুইপ বলেন, ‘অনেকে লেখেন কোরাম হয় না। তার মানে সংসদে এমপিরা উপস্থিত থাকে না? এটা ঠিক নয়।’ তার দাবি, মন্ত্রীরা অনেক সময় তাদের সংসদের ভেতরে কাজ করেন। এমপিরাও মন্ত্রীর রুমে গিয়ে এলাকার জন্য কাজ করেন।’
প্রধান বিরোধী দল জাপার সিনিয়র নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘এই সংসদ সবচাইতে বেশি কার্যকর সংসদ। এখানে আমরা ৫ বার সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছি। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে প্রতিবাদ করেছি। অথচ এই সংসদে একটিও অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার হয়নি। সেদিন গণতন্ত্রের ধারা অব্যহত রাখতে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জাপা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল বলেই এই সংসদ গঠিত হয়েছিল। এই সংসদ হচ্ছে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত রাখার প্রতীক। একই দলের জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘এই সংসদ গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। পুরোপুরি ওয়েস্ট মিনিস্টার সিস্টেমে যেতে না পারলেও এই সংসদ অতীতের সকল সংসদের চাইতে বেশি কার্যকর। আমরা সংসদে সরকারে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। দিস ইজ দ্যা অনলি ইফেকটিভ পার্লামেন্ট।’
বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সেদিন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল বলেই আজকের এই সংসদ। সেদিন বিএনপি নির্বাচনী ট্রেন ফেল করেছে পরবর্তি ট্রেনের জন্য বসে থাকুন। যদি কপালে থাকে ট্রেনে উঠবেন কপালে না থাকলে আসতে পারবেন না। সেদিন আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি।